এম.পলাশ শরীফ:: মহারাজ শেখ (৮৫), জীবন থাকলেও যাপনের কোন ব্যাবস্থা নাই। তাই জীবনের শেষ বয়সে ছিন্নমুল অবস্থায় তার দিন কাটছে উপজেলার উত্তর কদমতলা গ্রামের এক ব্যাক্তির বাড়ীতে। ইতিমধ্যে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গত দুই দিন ধরে শরনখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্যে আসছেন তিনি । কিন্তু হাসপাতালে চরম ডাক্তার সংকট থাকার কারনে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কেবল মাত্র ছিন্নমুল মহারাজ নয়,
৩ মার্চ (বুধবার) সকাল ১১টার দিকে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সরকারী ফি পরিশোধ করে (টিকিট) কেটে ডাক্তারের সাক্ষাত পেতে বহু সময় ধরে বর্হির বিভাগে অপেক্ষায় রয়েছেন, শ্বাস কষ্ট সহ বুকের ব্যাথা সমস্যা নিয়ে উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন ভোলার পাড় গ্রামের বাসিন্দা আ. মান্নান শিকদার(৭৬), হাত-পা ফুলা নিয়ে কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা আ. হামিদ হাওলাদার (৭০) সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় দুই শতাধিক নানা বয়সের রোগী ।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ৫০ সয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে কনসালটেন মেড়িসিন, সার্জারী, গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞ সহ ১৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহ মাত্র ৫ জন চিকিৎসক রয়েছেন। বাকি ৮ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য। এছাড়া ওয়ার্ড বয় তিনজনে আছে দুই জন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী পাঁচ জনের স্থানে আছে মাত্র একজন। আয়া নেই ও প্যাথলজিষ্ট নেই। এক্স-রে এবং ইসিজি মেশিন নষ্ট। অপারেশন থিয়েটারের (ওটির) যন্ত্রপাতি থাকলেও সেখানে কোনো অপারেশন হয় না। থিয়েটারটি ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হতে যাচ্ছে সরকারের মূল্যবান প্রায় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা উপজেলার দক্ষিন রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. বাবুল হোসেনের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, হাসপাতালে এসে ডাক্তার না পেয়ে রোগীরা এক প্রকার হাহাকার শুরু করছেন । শরনখোলা উপজেলায় বহু সমাজ পতি আছে তারা মানুষের মৌলিক সমস্যা নিয়ে কোন কথা বলে না । কিন্তু রাজনৈতিক দলের নেতারা সম্মলিত ভাবে উদ্দ্যেগ নিলে সেবা বঞ্চিত হতো না উপকুলীয় এই অঞ্চলের মানুষ। তাছাড়া বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক উন্নয়ন করায় করোনা দুর্যোগের মতো মহামারীতে সফল হয়েছেন । তাই উন্নয়নমুখী এ সরকারের আমলে হাসপাতালে এসে কাঙ্খিত সেবা না পাওয়াটা অত্যন্ত দুঃখ জনক। পার্শ¦বর্তী উপজেলা মোড়েলগঞ্জ হাসপাতালে ১৭ জন ডাক্তার আছে । কিন্তু আমরা শরনখোলাবাাসী কেন সব সময় ডাক্তার সংকটে থাকি তার আসল রহস্য কর্তৃপক্ষের জানানো উচিত। তবে, ডাক্তার সংকটের কথা স্বীকার করে, শরনখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্যের (আরএমও) ডা. মো. ফয়সাল আহম্মেদ জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ট্রেনিংয়ে , ডাক্তার নাদিয়া নওরিন ছুটিতে, করোনার জন্য ডা. সিরাজুল ইসলাম র্যাব ৬ এর কার্যালয়ে এবং ডা. তরিকুল ইসলাম এখান থেকে বদলী হয়ে গেছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী, শিশু ও এনেস্থিশিয়ার পদে কোন ডাক্তার পুষ্টিং না থাকায় প্রায় শুন্যের কোঠায় গিয়ে দাড়িয়েছে হাসপাতালের ডাক্তার সংখ্যা । যে কারনে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না । তবে, খুব দ্রুত এ সমস্যা কেটে যাবে বলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আশ্বস্থ করেছেন। অপরদিকে, বাগেরহাট সদর হাসপাতালের (সিএস) সিভিল সার্জন ডা. মো. হুমায়ুন কবির জানান, ডাক্তার সংকটের বিষয়টি আমার জানা আছে। তবে, দেশ জুড়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সংকট থাকায় ওই পাঁচ পদে কনসালটেন্ড ডাক্তার দেয়া যাচ্ছে না।
তবে শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্যের আপতকালীন সংকট উত্তোরনের জন্য ইতিমধ্যে উদ্দ্যেগ নেওয়া হয়েছে । আশাকরি শীঘ্রই এ সংকট কেটে যাবে।