চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃপ্রকল্প ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শরীয়তপুর খাল খনন কাজে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এর গতিপথ পরিবর্তন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।জানা গেছে, বর্তমানে শরীয়তপুর পৌর সদরের আঙ্গারিয়া বাজার সংলগ্ন কীর্তিনাশা নদী থেকে বুড়িরহাট অভিমুখী একটি খাল খনন চলমান রয়েছে। আর এই খাল খনন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে।
অভিযোগ রয়েছে, মোট অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এর গতিপথ পরিবর্তন করে বর্তমানে শত শত নিরীহ মানুষদের মালিকানাধীন বসতঘরের ওপর দিয়ে করা হচ্ছে এই খাল। আর এ অনিয়মের সহায়তা করছেন আঙ্গারিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতিসহ কতিপয় ব্যবসায়ী। এতে কেউ মুখ খুললে শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ী নেতাদের নানা হুমকির।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খাল খনন এলাকার মধ্যে নীলকান্দি মৌজার সোনাই দেওয়ানের মালিকানাধীন বসতঘর রয়েছে। যেখানে তিনি প্রায় ৬০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। সেই মালিকানা জমিতেই বর্তমানে চলছে খাল খননের কাজ। অথচ ওই জমি রয়েছে খালের অনেক উত্তরে।এ দিকে, ওই জমি থেকে একটু পূর্বে গেলেই দেখা যায়, খালের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে রেখেছেন বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সহসভাপতি সিরাজ সরদার। অভিযোগ রয়েছে, সেই জমি রক্ষা করতেই আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এই খাল খননের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এমনিভাবে খাল দখল করে নির্মিত লক্ষ্মী নারায়ণ সাহা, গোপাল সাহাসহ অনেকের বহুতল ভবন রক্ষা করতেই এর গতিপথ পরিবর্তন করে নিরীহ মানুষের বসতবাড়িসহ তাদের মালিকানাধীন জমি দিয়ে খাল খনন করা হচ্ছে। ফলে নিজ নামে রেকর্ডিয় জমি ও বসতবাড়ি হারিয়ে অনেক পরিবারই এখন দৌড়ঝাঁপ করছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে।
ভুক্তভোগী সোনাই দেওয়ান জানান, ‘খাল খননের জন্য আমার রেকর্ডিয় জমি থেকে ৬৫ ফুট জমি ছেড়ে দিয়েছি। তারপরও আমার বসতঘর, গোয়াল ঘর ও গভীর নলকূপ খালের মাটি দিয়ে ইতোমধ্যেই ঢেকে ফেলেছে। অথচ খালের জমি বাজারের ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছে।তিনি অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীদের দখলে থাকা ওই জমি রক্ষা করতেই ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে এই অপকর্ম করেছে।
বাজারের ব্যবসায়ী মহাদেব নাগ অভিযোগ করে বলেন, ‘খালের ওই জমিতে আমাদের দুইটি ভবনের ৪ ফুট করে জায়গা ছিল। সার্ভেয়ার আমার কাছে সমঝোতার প্রস্তাব পাঠায়। পরে সার্ভেয়ারের সঙ্গে আপস না করে আমি ভবনের ৪ ফুট ভেঙে খালের জায়গা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। অথচ আমাদের দুই ভবনের মাঝখানে গোপাল শাহার ভবনটি খালের জমির ৯ ফুট দখল করে আছে, তবুও তা ভাঙা হচ্ছে না। কোন অদৃশ্য শক্তি এখানে কাজ করছে তা আমার জানা নেই।
এ দিকে, একই বাজারের ব্যবসায়ী ও খাল খনন প্রকল্প সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা শফিউল্লাহ হুজুরসহ অনেক অসহায় পরিবার অভিযোগ করেন- আঙ্গারিয়া ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে আবেদন করেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘কার দোকানঘর খালের জমিতে পড়েছে ইতোমধ্যেই তার তালিকা করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী খাল খনন করা হচ্ছে। এরমধ্যে যদি কোনো অনিয়ম হয় তা বাজার ও বাজার ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই হচ্ছে। এখানে এক ব্যবসায়ী অন্য ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে। আসলে এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।এ দিকে, অভিযুক্ত ঠিকাদার আবু মিয়া জানান, ‘যেসব ভবন খালের জমির ভেতরে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেসব ভবনের তালিকা ইতোমধ্যেই ডিসি অফিসে দিয়েছে। তাই খালের ভেতরে থাকা ভবন ভাঙার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।
তিনি আরও জানান, ‘খাল খননের ব্যাপারে কোনো প্রকার অনিয়ম হচ্ছে না। আমরা কারও কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেই নি।এমতাবস্থায় প্রকৃত বিষয় জানতে যোগাযোগ করা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. সেলিমের সঙ্গে। এ সময় তিনি জানান, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে খাল পরিমাপ পরবর্তী খনন কাজ শুরু হয়েছে। খালের জমি দখল করে যে সকল স্থাপনা করা হয়েছে তার তালিকাও জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে করা হয়েছে। শুনেছি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। তখন অবৈধ স্থাপনা ভাঙা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছেও অভিযোগ এসেছে ঠিকাদার নাকি আর্থিক লাভবান হয়ে খালের গতিপথ পরিবর্তন করছে। তবে, সরেজমিন গিয়ে এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। অনেকে ভিত্তিহীন অভিযোগ করতে পারে। এ সময় তিনি আরও বলেন, আমাদের অফিস বা ঠিকাদার কোন অনিয়ম করছে না।