চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃশর্ত দিয়ে তিন দিনের জন্য ঘরে ফিরেছেন ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনরত খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। চার দিন পর তাদের আমরণ অনশন কর্মসূচিও স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার রাত সোয়া ১টায় শ্রমিক নেতাদের দেয়া তিনদিনের স্থগিতাদেশ মেনে নিয়ে নিজ নিজ ঘরে ফেরেন সাধারণ শ্রমিকরা।
তবে, তাদের আন্দোলনের স্থানে নির্মাণকৃত প্যান্ডেল, তাবু ও মঞ্চ এখনই তারা ভাঙছেন না। ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় পাটমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দাবি মেনে নেওয়া না হলে ১৭ ডিসেম্বর থেকে আবারো অনশন পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএ’র সভাপতি শাহানা শারমিন।
এর আগে শুক্রবার রাতে নগরীর বয়রাস্থ শ্রম অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মজুরি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের চলমান অনশন কর্মসূচি ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করার আহবান জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
এ সময় শ্রমিক নেতারা বলেন, সাধারণ শ্রমিকদের কাছে এ প্রস্তাব দেয়া হবে। তারা যদি মেনে নেয় তাহলেই কেবল এটি বাস্তবায়ন হতে পারে।
মতবিনিময় সভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিক নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই পাটকল এবং শ্রমিকদের ব্যাপারে আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খুলনার বন্ধ হওয়া পাটকলগুলো চালু হয়েছে। এ সরকারের আমলে মজুরি কমিশন ২০১৫ পাশ হয়েছে এবং এ সরকারই তা বাস্তবায়ন করবে। প্রতিমন্ত্রী শ্রমিক নেতাদের বলেন, দাবি-দাওয়া পূরণ করতে এক সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ প্রেক্ষাপট তৈরি করা দরকার।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। এছাড়া জাতীয় মজুরি কমিশন ২০১৫ বাস্তবায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আগামী ১৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এবং বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)’র সভাকক্ষে শ্রমিক নেতাদের সাথে সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস উপলক্ষে চলমান অনশন প্রত্যাহার করার জন্য তিনি শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠকে খুলনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইউসুপ আলী, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. কাউসার শিকদার এবং আন্দোলনরত পাটকলগুলোর সিবিএ ও ননসিবিএ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির জানান, শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বরের বৈঠকে দাবি পূরণ না হলে ১৭ ডিসেম্বর থেকে আবারও আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করা হবে। অনশন স্থগিত হওয়ার পর খালিশপুরের বিআইডিসি সড়ক থেকে অনশনরত সকল শ্রমিকরা ঘরে ফিরে গেছেন বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা বাস্তবায়ন দাবিতে ১০ ডিসেম্বর থেকে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয় পাটকলের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরণ অনশন শুরু করে শ্রমিকরা। এতে প্রায় অর্ধ লক্ষ শ্রমিক অংশ নেন। ইতোমধ্যে বৃহস্পতিবার আব্দুস সাত্তার নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকাল ১০টায় তার জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে তাকে দাফন করা হয়।
এছাড়া দুই শতাধিক শ্রমিক এ অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন সবাই তাকিয়ে আছেন রোববারের বৈঠকের দিকে। বৈঠক ফলপ্রসু না হলে আবারো আমরণ অনশনে বসার হুঁশিয়ারি রয়েছে শ্রমিক নেতাদের।