চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃআপন মা বেঁচে নেই। নিজ পিতা ও সৎ মা-ই একমাত্র ভরসা। অথচ সেই ভরসার স্থান থেকেই লাশ হয়ে ফিরল প্রথম শ্রেণীর শিশুছাত্র রমজান শেখ (৭)। বাবা ইলিয়াস শেখ ও সৎ মা তহমিনা মিলে তাকে হত্যা করে ফেলে রেখে পালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি শিশু তুহিনের বর্বর হত্যাকাণ্ডের পরপরই গতকাল বুধবার দুপুরে নিষ্ঠুর এ ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সিংগা গ্রামে। পরে খবর পেয়ে সন্ধ্যায় পুলিশ নিহত শিশু রমজানের লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
নিহত রমজানের খালা লাকি বেগম অভিযোগ করেন, রমজানকে তার বাবা ও সৎ মা হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে।
জানা যায়, প্রতিদিনের ন্যায় বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গ্রামের সিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে যায় শিশু রমজান। সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস শেষে সাড়ে ১১টা কিংবা ১২টার দিকে বাড়ির দিকে রওয়ানা হয় সে। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও রমজান বাড়িতে ফিরে আসেনি। এরপর বিকেল ৪টার দিকে বাবা ইলিয়াসের বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাগানে সাদা শার্ট ও নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট পরা অবস্থায় রমজানের লাশ পাওয়া যায়। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ সন্ধ্যায় দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি থানায় নিয়ে যায়। এদিকে, নিহতের বাবা ইলিয়াস শেখ ও সৎ মা তহমিনা ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে।
নিহত শিশু রমজানের স্বজন ও এলাকাবাসীরা জানায়, সিংগা গ্রামের ইলিয়াস শেখের বড় স্ত্রী তহমিনা থাকা অবস্থায় ইলিয়াস শেখ নিহত রমজানের মা মাবিয়াকে বিয়ে করেন। দুই স্ত্রী নিয়ে ইলিয়াসের সংসারে সুখ ছিল না। তিন থেকে চার বছর আগে মাবিয়ার মৃত্যু হয়। এ সময় রমজানের বয়স ছিল এক কি দুই বছর। জীবিত থাকা অবস্থায় রমজানের মা মাবিয়া পারিবারিক ঝামেলায় স্বামীর নামে লোহাগড়া বিজ্ঞ পারিবারিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলার রায়ে মাবিয়া ও তার মাকে খরচ বাবদ মাসে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার রায় ঘোষণা করে বিচারক। যা প্রতিবছর টাকার পরিমাণের হিসেবে বৃদ্ধি পাবে। এরই মধ্যে মাবিয়ার মৃত্যু হয়। মেয়ের মৃত্যুর পর আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিহত রমজানের নানা এক থেকে দুই মাসের টাকা নিয়েছেন।
এদিকে, দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর পরেই ইলিয়াস শেখ টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। বাবার কাছে শিশু রমজানের পাওনা এখনো প্রায় এক লাখ আশি হাজার টাকা। এলাকাবাসীদের ধারণা এ টাকার জেরেই বাবা ইলিয়াস ও সৎ মা তহমিনা শিশু রমজানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
শিশু রমজানের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে লোহাগড়া থানার এএসআই সাইফুল জানান, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এ সময় নিহত শিশু রমজানের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে উল্লেখ করে লোহাগড়া থানার ডিউটি অফিসার এসআই তপন জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের মামা ইউসুফ শেখকে থানায় আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার ওসি মোঃ মোকাররম হোসেন জানান, বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।