খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপিত হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী ও আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন। সভাপতিত্ব করেন আইন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. ওয়ালিউল হাসানাত। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. তরুণ কান্তি বোস ও অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপক চন্দ্র মন্ডল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার মানুষ। তাঁর অন্যতম আর্দশ ছিলো সহনশীলতা ও সত্যবাদিতা। তিনি দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন। দেশের মানুষও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতেন। তিনি জনমানুষের ভালোবাসার এই প্রতিদান তাঁর জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেন, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে যে কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়; তা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আস্তে আস্তে দূর হয়। দেশ ঘুরে দাঁড়ায়। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ শুধু মুখে বললে হবে না, অন্তরে ধারণ করতে হবে। আজকের দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে যে, আমরা মানুষ, আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো সহনশীল হবো, দেশপ্রেমিক হবো। নিজেদের মধ্য থেকে কলুষতা দূর করতে হবে। মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে হবে, পারস্পারিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা ধারণ করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
মুখ্য আলোচক তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন আপদমস্তক দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ। তিনি ছাত্রজীবনের শুরু থেকে প্রতিবাদী ছিলেন। কলকাতায় ছাত্রজীবনে অধ্যয়নের সময় প্রতিবাদ ছাড়াও সাংগঠনিক নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। দেশে এসে স্ত্রী-সন্তান, ঘর-সংসার ছেড়ে ঢাকায় থেকে রাজনীতি করেছেন। তিনি জানতেন বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা, সার্বভৌমত্বের জন্য তাদেরকে সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। এ উপলব্ধিতে তিনি পর্যায়ক্রমে গণতান্ত্রিক যুবলীগ, ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি কারাগারে থেকেই আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দুরদর্শী। জাতির আকাঙ্খা ও মুক্তির জন্য কি কি দরকার তা তিনি বুঝতে পারতেন। বঙ্গবন্ধু তখন আপোষ করলে পাকিস্তানের সরকার প্রধান হতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা চাননি। তিনি বাংলার মানুষের মুক্তি চেয়েছেন, স্বাধীনতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। ৬ দফাকে কেন্দ্র করে গোটা জাতিকে তিনি এক করতে পেরেছিলেন। মানুষের মনে নবচেতনা জাগ্রত করেছিলেন। তাঁর দেশপ্রেম ও সাহস ছিলো প্রশ্নাতীত, যা তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়েছিলো। তাঁর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণার পর মুক্তিকামী মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি পাকিস্তানীদের হাতে বন্দি হলেও মুক্তিকামী মানুষ তার নির্দেশনা মেনে জীবন বাঁজি রেখে যুদ্ধ করে। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে মৌলবাদের উত্থান হয়েছিলো। হত্যার পরও তাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা জানতো না যে, জীবন্ত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ ক্ষুধা মুক্ত করেছেন। উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের কেউ এখন না খেয়ে মারা যায় না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষ হতে হবে। আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম থাকতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মতোই আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে, আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নেও কাজ করতে হবে। তবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
আলোচনা সভা শেষে দিবসটি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রধান অতিথিসহ অতিথিবৃন্দ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এর আগে সকাল ৯টায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সামনে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন কর্র্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শুরু করে হাদী চত্বর ঘুরে কালজয়ী মুজিব প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, বিভাগীয় প্রধান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্টবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘কালজয়ী মুজিব’ এর বেদীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য প্রথম শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) উপস্থিত ছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, বিভিন্ন ডিসিপ্লিন, আবাসিক হলসমূহ, শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ ও কর্মচারীবৃন্দের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। পরে আইন ডিসিপ্লিন কর্তৃক প্রকাশিত দেয়ালিকা ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন হোক রঙিন’ উদ্বোধন করেন উপাচার্য। এসময় আইন ডিসিপ্লিনের ডিন ও ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ ওয়ালিউল হাসানাতসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিলো বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও প্রশাসন ভবন সংলগ্ন মসজিদে দোয়া, কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রার্থনা, দিনব্যাপী ব্লাড গ্রুপিং, বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে প্রদীপ প্রজ্বালন, বিকাল ৪টায় মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেট, মেইনগেট থেকে হাদী চত্বর পর্যন্ত রাস্তা, প্রশাসন ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, হলসমূহ এবং উপাচার্যের বাসভবন আলোকসজ্জা করা হয়।