খুলনা অফিসঃ প্রি পেইড মিটারে অস্বচ্ছতা এবং নানা দুর্নীতি-অনিয়মের কথা স্বীকার করে নিয়েই এসব থেকে ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডকে মুক্ত করতে ছয় মাসের সময় চাইলেন ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো: শফিক উদ্দিন।
খুলনা প্রেসক্লাবে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হন ওজোপাডিকোর এমডি। এসময় বিশাল বহর নিয়ে আসা এমডি অনেকটা বিব্রতবোধও করেন। বিশেষ করে কোম্পানি সচিবের সাম্প্রতিক পারিবারিক কাজে ভারত সফরকে কেন্দ্র করে উত্থাপিত প্রশ্নের কোন জবাব দিতে না পেরে এক পর্যায়ে এমডি বলেন এটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু মন্ত্রনালয়ের জি.ও এবং কোম্পানীর দপ্তরাদেশ নিয়ে ভারত সফরকে ব্যক্তিগত বলা যায় কি না এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এমডি ছয় মাস সময় নিয়ে তড়িঘরি করে সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন।
সোমবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওজোপাডিকোর এমডি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্যই পদ্মার এপারের একুশ জেলার গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে ওজোপাডিকো। কোম্পানীর লক্ষ্য হচ্ছে সকলের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ¦ালানী সরবরাহ করা। এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার মেগাওয়াট, এক লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ ও পুনর্বাসন, ৪৮০টি উপকেন্দ্র নির্মাণ ও আধুনিকায়ন, নতুন ৭০ লাখ গ্রাহককে সংযোগ দেয়া, ৩০টি গ্রাম বিদ্যুতায়ন করা, এক লাখ ৯০ হাজার ওভারলোড বিতরণ ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপনসহ নানা কর্মসূচির কথাও জানান ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সম্প্রতি খুলনার কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রি-পেইড মিটার সম্পর্কে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক নির্ধারিত বিদ্যুতের মূল্যহার (ট্যারিফ রেট) ও চার্জ (ডিমান্ড চার্জ, ভ্যাট) মোতাবেক প্রি-পেইড মিটার হতে টাকা কর্তন করা হয়। যা পূর্বের পোস্ট পেইড/ডিজিটাল মিটারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল। এছাড়া অতিরিক্ত কোন চার্জ কর্তন করার সুযোগ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানীর নির্বাহী পরিচালক(অর্থ) রতন কুমার দেবনাথ ও নির্বাহী পরিচালক(প্রকৌশল) হাসান আলী তালুকদারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন প্রি পেইড মিটারের সাথে সংশ্লিষ্ট বেশকিছু কর্মকর্তাও।
সংবাদ সম্মেলনে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিক উদ্দিন সংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে উত্তর দেয়ার জন্য প্রি পেমেন্ট মিটার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো: শহীদুল ইসলাম ও উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রকিবুল ইসলামের ওপর দায়িত্ব দেন। এক পর্যায়ে তারা দু’জনও সব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে এমডি মাইক নিয়ে বলেন, আসলে সব বিষয় ওজোপাডিকোর সাথে সম্পৃক্ত নয়। অনেক বিষয় আছে যার সাথে মন্ত্রণালয় এবং প্রশাসন জড়িত। তবে আনসারসহ দেহরক্ষী নিয়ে তার চলাচলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, তার কোন দেহরক্ষী নেই। যেসব আনসার সদস্যদের তিনি প্রেসক্লাবে নিয়ে এসেছেন তারা নিরাপত্তাজনিত কাজেই এসেছেন। তাছাড়া ওজোপাডিকো সদর দপ্তরকে গ্লাসরুমে আবদ্ধ করে সেখানেও রাইফেলধারী আনসার সদস্য নিয়োজিত রাখা সম্পর্কে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সেখানে যেহেতু সদর দপ্তর এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষসহ আর্থিক বিষয়াদি সম্পৃক্ত সেহেতু নিরাপত্তার জন্যই এটি করা।
এমডির একাধিক গাড়ি ব্যবহার সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন না। শুধুমাত্র একটি ঢাকায় ও একটিতে খুলনায় চলেন এবং একটি তাকে ঢাকায় আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহার হয়।
এসময় সাংবাদিকরা খুলনার গ্রাহকদের সাম্প্রতিক আন্দোলন প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ফ্রি মিটার দেয়ার কথা বলে মিটার ভাড়া আদায়, আগের পোষ্ট পেইড মিটারের দায়ভার কে নেবে, সফটওয়ার জটিলতার কারনে বিল বেশি আসা, মিটারে সমস্যা দেখা দিলে সংস্কারের ব্যবস্থা না থাকা, প্রি পেইড মিটার রিচার্জের পাশাপাশি পোষ্ট পেইডেরও বিল দেয়া, বিইআরসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে দু’বছর ১% রিবেট না দিয়ে দু’কোটি টাকা কোম্পানীর কাছে রাখা, বেসপ্লেট নষ্ট হওয়ার দোহাই দিয়ে মিটার লক করা, আবার মিটার বাইপাসের কথা বলে গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা, ওজোপাডিকোতে নির্দিষ্ট জনসংযোগ কর্মকর্তা না থাকা, ডিপিপির বাইরে প্লানিং কমিশনের অনুমোদন না নিয়ে ৫০ কোটি টাকা মূল্য দিয়ে উপকেন্দ্রের জমি কেনা, এক সময় জিয়া পরিষদ করে এখন বঙ্গবন্ধু পরিষদের নামে কোন কোন প্রকৌশলীর সুবিধা গ্রহণ, নিম্মনমানের সাব ষ্টেশন নির্মাণসহ বিভিন্ন অনিয়মের যে চিত্র ফুটে উঠেছে সে বিষয়ে কোম্পানীর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চাইলে ছয় মাসের সময় চেয়ে এমডি বলেন, আগামী ছয়মাস পর এসব প্রশ্ন আর আসবে না বলে আশা করা হচ্ছে। এজন্য তিনি ছয় মাসের সময় নিয়ে বলেন, এর মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে ওজোপাডিকোর এমডি প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের ফলে গ্রাহকরা যে সকল সুবিধাদি পাচ্ছেন তার বেশ কিছু বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার শর্ট সার্কিট জনিত দুর্ঘটনা রোধ করে গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহার নিরাপদ করে। স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং পদ্ধতিতে ভেন্ডিং স্টেশন এবং মোবাইল ভেন্ডিং এর মাধ্যমে বিল পরিশোধ সহজসাধ্য যা এনালগ/ডিজিটাল মিটার পদ্ধতির মিটার রিডিং সংক্রান্ত যাবতীয় ঝামেলা থেকে মুক্ত। ব্যবহারকারী পরিবারের বাজেট অনুযায়ী বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায় বা যে কোন গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে পারে। মিটারে ব্যালান্স শেষ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে মিটার হতে ১০০/-(একশত টাকা) অগ্রীম ব্যালান্স নেয়ার ব্যবস্থা থাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ার কোন আশংকা নেই। সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্রবার ও শনিবার), সরকারী ছুটির দিনে এবং অফিস সময়ে