বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের চলমান পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে চাইলে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে। এই সংগ্রাম শুধু বিএনপির একার নয়। সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে সংগ্রাম করতে হবে, লড়াই করতে হবে।
এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, প্রশাসন দলীয়করণ করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে এবং দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। এসব থেকে আমরা মুক্তি চাই। এ সময় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। মহানগরসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়।
সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, অন্তত ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়েছে অন্তত ৭০ জন নেতাকর্মী। নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি ও কারচুপির’ অভিযোগ এনে এই দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি। বেলা ১১টায় এই সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল। সকাল ১০টা থেকেই প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন।
সমাবেশকে ঘিরে প্রেস ক্লাবের আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে বিএনপির নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে যান চলাচল কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। পৌনে ১১টার দিকে সচিবালয়ের পশ্চিম সড়ক হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি অংশ সমাবেশস্থলে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। নেতাকর্মীরা বাধা অতিক্রম করে এগোতে চাইলে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় পুলিশকে বিএনপির নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করতে দেখা যায়।
একপর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা চারদিকে ছোটাছুটি শুরু করেন। পরে সমাবেশস্থল থেকে মাইকে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়। এর পাঁচ মিনিট পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়।
রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার এসএম শামীম বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যারা বিশৃঙ্খল তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে বলেছি। এর বাইরে কিছুই হয়নি। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।
নির্বাচন কমিশন মিথ্যা কথা বলে অভিযোগ করে সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের কথা শুনলে মানুষ হাসে। এখন নাকি খুব সুন্দর নির্বাচন হচ্ছে, চমৎকার নির্বাচন হচ্ছে। ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন করে। এক জায়গায় ভোট দিলে আরেক জায়গায় পড়ে। ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিলে নৌকায় গিয়ে পড়ে; এই অবস্থা তৈরি করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের খুব লজ্জা হয় দুঃখ হয়- যখন দেখি সমাবেশে নেতাকর্মীদের আসতে রাস্তায় রাস্তায় বাধা দেয়া হচ্ছে। যখন দেখি এই সমাবেশ পণ্ড করার জন্য আজকে অসংখ্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। আবার যখন দেখি এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা গণতন্ত্র দিয়েছেন বলেই দেশ খুব ভালোভাবে চলছে। এই দিনটি হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় দিন।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিল গণতন্ত্রের জন্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য। সেই চেতনাকে ধ্বংস করে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে এই দিনে (৩০ ডিসেম্বর) জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা চুরি, মেগা লুটপাট, শেয়ারবাজার চুরি করে ধ্বংস করে ফেলেছে। ব্যাংকগুলোকে লুট করা হয়েছে। অর্থ পাচার করে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। দেশে কোভিড-১৯ শুরু হয়েছে মার্চ মাস থেকে। তখন থেকে লুট করে করে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
দেশে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ডিজিটাল অ্যাক্টের মাধ্যমে গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ শিকার করা গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে। এই সরকার গোটা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। এ থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে।
মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার ও উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম নকির পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, আমিনুল হক, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল : বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বুধবার দুপুরে মিছিলটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহ-সভাপতি আশরাফুল আলম লিংকন, পার্থদেব মণ্ডল, মামুন খান, সাজিদ হাসান বাবু, যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন রাজু, তানজিল হাসান, রিয়াদ ইকবাল, সহ-সাধারণ সম্পাদক সাখওয়াত হোসাইন প্রমুখ।