চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ খুলনা মহানগরীর মাহবুব ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি শেখ মাহবুবুর রহমান ও এসিসটেন অফিসার মোঃ সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের জামিন না মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মামলায় তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ শহীদুল ইসলাম জামিন না মঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। মামলার অপর এক আসামি নগরীর গোবরচাকা এলাকার মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে মোঃ মজিবর রহমানের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। খুলনাঞ্চলের যেখানেই বড় দাগের বা ভেজাল সম্পতি বিক্রি করা হউক মাহবুব ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাহবুবুর রহমান তা ক্রয় করবেন । দৌলতপুর স্টিমার ঘাট এলাকায় সত্য নারায়ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে মসজিদ নির্মাণ করছে মাহবুব ব্রাদার্স । সেখানে তারা নির্মান করছেন গোল্ডেন ফ্লাওয়ার নামক প্রতিষ্ঠান। শুধু স্কুলের জায়গাই নয় দখল করছেন নদীর তীর ভুমি । নদীর পাড় থেকে প্রায় ৪০/৫০ ফিট নদী ভরাট করে পাইলিং করা হয় । পাইলিংকৃত নদীর পাড়ে গড়ে তুলেছেন গোল্ডেন ফ্লাওয়ার মিলের সাইলো কাম টার্মিনাল । মাহবুব ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে শুধু স্কুলের জায়গা দখলই নয় দখল করছেন,মসজিদের জায়গা ও নদীর তীরভুমি ,ঐ এলাকার অধিকাংশ হিন্দু সম্পত্তি জোরপূর্বক সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে আত্মসাত,দৌলতপুর আকাংখা টাওয়ার নির্মানে সিটি কর্পোরেশন ও সওজের জায়গা দখল,এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের মেঘা প্রকল্প খুলনা যশোর মহাসড়কের কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স । ইতিমধ্যে ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ যশোর-খুলনা জাতীয় মহাসড়কটির নিন্মমানের কাজ এবং পুরাতন মালামাল ব্যাবহারের অভিযোগ রয়েছে মাহবুব ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে । এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্র পত্রিকায় লেখা লেখি হলেও সওজ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেনের ঘুষ বানিজ্যের কারনে সেটি ধামাচাপা দেয়া হয় । দুর্নীতি দমন কমিশন মাহবুব ব্রাদার্সের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করলেই বেরিয়ে যাবে আরো অনেক অপকর্মের গুরুত্বপূর্ন তথ্য ।
এছাড়াও মাহবুব ব্রাদার্সের রিয়েল এ্যাষ্টেড ব্যাবস্যা রয়েছে । আকাংখা ডেভেলপার্স নামে । এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব শেখ মজনু ।
দুদক সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২০ জুলাই খুলনার দুদক কার্যালয়ে হাতিম গ্র“পের চেয়ারম্যান ফজল-ই-হোসেন এবং মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক শেখ মাহাবুব রহমানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে নগরীর লবণচরাস্থ ‘কুরাইশি স্টীল লিমিটেড’ এর ছয় কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের সম্পত্তি আত্মসাতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। দুনীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম খুলনা থানায় তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন (যার নং-৩)।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, কুরাইশি স্টীল লিমিটেডের সরকারি অংশের শেয়ার না জানিয়ে বিক্রি, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসইসিকে অবহিত না করে মিলের উৎপাদন বন্ধ, প্রতিষ্ঠানটির যন্ত্রপাতি গোপনে বিক্রি এবং মিলের জমির মালিকানার প্রকৃত তথ্য গোপন করে দু’টি পৃথক রেজিস্ট্রি সাব-কবলা দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট রোডের সরাফ আলীর ছেলে ও হাতিম গ্র“পের চেয়ারম্যান ফজল-ই-হোসেন, তার আপন ভাই সাফাকাত হোসেন এবং মোহাম্মদ হোসেন, চট্টগ্রামের সদরঘাট রোডের মৃত মোহসীন আলীর ছেলে ফখরুদ্দীন মোঃ জালালী, নগরীর ১৭ ক্লে রোডের মৃত শরাফ আলীর ছেলে এনায়েত হোসেন, নগরীর দৌলতপুরের শেখ মজনুর ছেলে ও মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাহাবুবুর রহমান, দৌলতপুরের মৃত মানিক আহম্মদ হাওলাদারের ছেলে এবং মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের এ্যাসিসটেন্ট অফিসার মোঃ সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার, হাতিম গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজল-ই-হোসেনের স্ত্রী আমাতল্লাহ এফ হোসেন এবং খুলনা মহানগরীর গোবরচাকা এলাকার মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে মোঃ মজিবর রহমান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, নগরীর লবণচরাস্থ ৬ দশমিক ৭৮ একর জমির ওপর ১৯৬৯ সালের ২ ডিসেম্বর ব্যক্তি মালিকানায় কুরাইশি স্টীল লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনতা উত্তর অবাঙালি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসাবে রাষ্ট্রপতির আদেশে জাতীয়করণ করা হয়। পরবর্তীতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্টীল মিলস্ করপোরেশন পরবর্তীতে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচালিত হয়। ১৯৮৪ সালের সরকারের গৃহীত বেসরকারিকরণ নীতির আলোকে জনস্বার্থে কুরাইশি স্টীল লিমিটেডের পূর্বের শেয়ার হোল্ডারগণের নিকট প্রতিষ্ঠানটি শর্ত সাপেক্ষে বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে সম্মত হওয়ায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কুরাইশি স্টীল লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডারগণের পক্ষে ফজল-ই- হোসেনের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী সরকার বা বিএসইসির শেয়ার ৪৩ দশমিক ৬ ভাগ এবং ক্রেতা পক্ষ ফজল-ই-হোসেন গংদের নামে অবশিষ্ট ৫৬ দশমিক ৪ ভাগ শেয়ার হস্তান্তরের শর্ত বিদ্যমান ছিল। চুক্তিতে প্রধান বিষয় ছিল, ক্রেতা পক্ষ প্রতিষ্ঠানের সকল দেনা, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের পাওনা পরিশোধ করবেন। যতদিন পরিশোধ করবেন না ততদিন বিএসইসির প্রতিনিধির সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। সরকারের অনুমতি ছাড়া ক্রেতাপক্ষ তাদের শেয়ার হস্তান্তর ও মিলের পরিবর্তন করতে পারবে না। পরবর্তীতে ক্রেতা পক্ষ শেয়ারের মূল্য সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় এবং আংশিক পরিশোধিত মূল্য সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়। সে কারণে প্রতিষ্ঠানটির সকল ক্ষমতা সরকার বা বিএসইসির অনুকূলে বহাল থাকে। এ ঘটনার পর ২০১৭ সালের ১৩ জুন খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটির দখল গ্রহণপূর্বক সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে মিলটির যন্ত্রপাতি অবকাঠামোর অস্তিত্ব নেই। পাশাপাশি ফজল-ই-হোসেন মালিকানার প্রকৃত তথ্য গোপন করে ৩ দশমিক ৪২ এবং ৩ দশমিক ৩৬ একর জমি ৬ কোটি ১০ লাখ টাকায় মাহাবুব ব্রাদার্সের নিকট বিক্রি করে। মামলার দুদকের আইনজীবী ছিলেন এড. খন্দকার মুজিবর রহমান। আসামি পক্ষে ছিলেন এড. রজব আলি সরদার ও ইমদাদুল হক।