পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি একেএম আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় রোববার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক আলী আকবর বাদী হয়ে সংস্থাটির ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দুটি দায়ের করেন। মামলা দুটিতে আউয়ালের বিরুদ্ধে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৫ টাকা ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ৫০ টাকা অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রথম মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাবেক এমপি আউয়াল অবৈধভাবে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৫ টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তবে তিনি দুদকে দাখিল করা সম্পদের বিবরণীতে ১৫ কোটি ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। দ্বিতীয় মামলার অভিযোগে বলা হয়, আউয়ালের স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ৫০ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিকানার তথ্য রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত বরিশাল জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক দেবব্রত মণ্ডল ৩টি মামলা হওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
দুদকের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ১নং মামলায় একেএমএ আউয়ালের সঙ্গে তার স্ত্রী লায়লা পারভিনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, পরপর দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় একেএমএ আউয়ালের প্রভাব ব্যবহার করে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটা মৌজায় দশমিক ০৩ একর জমি বেনামে লিজ নেন লায়লা পারভিন। পরে সেখানে একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করে মাসিক ১৭ হাজার ২৫০ টাকা চুক্তিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাছে ভাড়া দেন তিনি।
এই সংক্রান্ত চুক্তিপত্রেও লায়লা পারভিনের স্বাক্ষর রয়েছে। ১৪২১ সালে লিজ নেয়া এই জমির লিজ পরে আর নবায়ন করা হয়নি। তদন্তে দেখা যায়, ওই জমির লিজি লায়লা পারভিন না হওয়া সত্ত্বেও সরকারি খাস জমি তিনি প্রতারণার মাধ্যমে বেনামি লিজ নিয়ে সেখানে বেআইনিভাবে ভবন নির্মাণ এবং তা ভাড়া দিয়েছেন। এ ঘটনায় এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৪২০, ৪০৯ এবং ১০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় এই মামলা হয়।
২ ও ৩নং মামলায় আসামি করা হয়েছে এককভাবে সাবেক এমপি আউয়ালকে। এই দুটি মামলায়ও তার বিরুদ্ধে সরকারি খাস এবং অর্পিত সম্পত্তি জালজালিয়াতির মাধ্যমে দখল ও সেসব জমিতে পাকা ভবন নির্মাণের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২নং মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, পিরোজপুর সদরে অবস্থিত রাজার পুকুর নামে পরিচিতি পুকুরটি অবৈধভাবে দখল করে এটি ভরাট এবং এর চারপাশে সীমানা প্রচীর নির্মাণ করে নিজ দখলে নেন সাবেক এমপি আউয়াল।
এখানে রাজার পুকুরের পাশাপাশি অন্যদের জমিও জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করে দখল করেন তিনি। দখলকৃত এই জমির মধ্যে ভিপি তফসিলভুক্ত জমিও রয়েছে। এখানে মোট দশমিক ৪৪ একর জমি দখল করেছেন সাবেক এমপি আউয়াল এবং তার স্ত্রী লায়লা পারভিন।
দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা তার তদন্তকালে এই জমি দখল, জালজালিয়াতির মাধ্যমে মালিকানার ভুয়া কাগজপত্র তৈরি এবং প্রতারণার প্রমাণ পান। যে কারণে ২নং মামলায় আউয়ালের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৪২০ ও ৪০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
৩নং মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার স্বরূপকাঠি মৌজায় সরকারি অর্পিত ‘ক’ তফসিলভুক্ত দশমিক ৫ একর জমি নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে একেএমএ আউয়াল ফাউন্ডেশনের নামে ৫ বছরের জন্য লিজ নেন আউয়ালের স্ত্রী লায়লা ইরাদ। এ ক্ষেত্রে এমপি থাকাকালীন স্বামী আউয়ালের প্রভাব ব্যবহার করা হয়।
২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল করা আবেদন অনুযায়ী ১৪১৬ থেকে ১৪২১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরের জন্য লিজ পাওয়ার পর ২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট ওই লিজি জমিতে একটি পাকা ভবন নির্মাণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয় লায়লা ইরাদের নামে। যদিও সেই আবেদনটি ছিল স্বাক্ষরবিহীন। সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে পাকা ভবন করার অনুমতি না দেয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ‘ক’ তফসিলভুক্ত ওই লিজি সম্পত্তিতে দোতলা একটি পাকা ভবন নির্মাণ করে জমিটি স্থায়ীভাবে দখলের চেষ্টা এবং সেখানে একেএমএ আউয়াল ফাউন্ডেশন নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
তাছাড়া লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও লিজ নবায়নের কোনো আবেদন কিংবা বকেয়া লিজের টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। যে কারণে সাবেক এই এমপির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৪২০ ও ৪০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে টানা দুইবার পিরোজপুর-১ আসন থেকে নৌকার টিকিট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আউয়াল।