শাহজাহান সিরাজ, কয়রা প্রতিনিধিঃ বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী বদরুদ্দীন উমর বলেছেন “ অলস মস্তিস্ক শয়তানের বন্ধু” মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘ মেয়াদী স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় কয়রায় শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল ছেড়ে এড্রুয়েট মোবাইলে ফ্রি ফায়ার ও পাবজী গেমের দিকে ঝুকে পড়ছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রাইমারি স্কুল পড়–য়া থেকে শুরু করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গেম খেলায় জড়িয়ে পড়ায় অভিভাবকদের কাছে মাঝে মধ্যে লাঞ্চিত হচ্ছে এবং এ ধরনের খেলা উপজেলার প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় হচ্ছে এমনটি অভিযোগ শিক্ষক ও অভিভাবকদের। তেমনি কয়রা উপজেলায় গ্রাম পাড়া মহল্লায় উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীদের আড্ডা ও অনলাইন গেম খেলা চোখের পড়ার মত। এ থেকে হয়ত অপরাধের গ্যাং গ্রুপ তৈরি হওয়ার আশংকা থাকে। শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার টেবিল ও খেলাধুলার মাঠ ছেড়ে ফেসবুক, ইউটউিব, এবং প্রযুক্তি ভিত্তিক কর্মে তাদের সময় কাটছে। ইমো, ভাইবার, টুইটার ও হোয়াটসআ্যাপে নতুন নতুন ছবি আপ ও চ্যাটিং করছ্ধেসঢ়; সময় নষ্ট করে তৈরি করছে টিকটক ভিডিও। এই কাজে নারীরাও পিছিয়ে নেই। সারা দিন এমনকি রাত জেগে ইন্টারনেটে খেলছে ফাইটিং ফ্রি ফায়ার ও পাবজির মতো নেশা ধরা গেম। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে স্কুল কলেজ পড়–য়া যুবক কিশোররা মোবাইলে এমন ভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে যা মাদকের চেয়ে ভয়ংকার। বিকালের সময় কয়রা উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চলে দেখা গেছে কিশোররা ইন্টারনেটে ফ্রি ফায়ার গেম নিয়ে পড়ে আছে যাদের বেশিরভাগই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী।
এ বিষয় বিভিন্ন সূত্রে জানার পর সম্প্রতি উপজেলার একাধিক গ্রাম ঘুরে শিক্ষার্থীদের এন্ড্রুয়েট মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে চায়ের দোকান, গাছ তলা, রাস্তার পাশে এবং মাঠের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। এছাড়া অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীদের তিন থেকে পাঁচ জনে মিলে গেম খেলতে দেখা গেছে। এসময় একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে গেম খেলা অবস্থায় কথা বললে তারা জানান, স্কুল বন্ধ তাই সময় কাটানোর জন্য খেলা করি। এ বিষয় অনেকে আরও বলেন, আমরা তো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের মতো চাঁদাবাজি ও মারামারি করি না। সম্প্রতি এ ধরনের খেলা নিয়ে মহারাজপুর, শ্রীরামপুর ও ফুলতলা বাজারে পঞ্চম শ্রেনী ছাত্র আকাশ ও রবি, ষষ্ট শ্রেনীর ছাত্র মেকাইল ও হাসেম, অষ্টম শ্রেনী দিপু, নবম শ্রেনী হারুন, মঠবাড়ী গ্রামের অষ্টম ও নবম শ্রেনীর ছাত্র গনেষ, পরিতোষ এবং বামিয়া ও দেয়াড়া গ্রামের আলিম পড়–য়া মাদ্রাসা ছাত্র আঃ বাতেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া সজিব, গিলাবাড়ী নাইম দেউলিয়া বাজার সুমনের সাথে খেলা চলাকালিন সময় কথা হয়। এ সময় তারা বলেন, ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম ব্যবহার করি, করোনা ভাইরাসের কারনে সারা বিশ্ব যেখানে থমতমে আছে সেখানে আমাদের মতোন ছাত্ররা কি করবে, সারা দিন তো আর ঘরে বসে দিন কাটাতে পারি না। স্কুল বন্ধ, কোচিং বন্ধ একা একা বাসাতে থাকতে সময় যেন আর যাই না তা অনলাইনে গেম ফ্রি ফায়ারে সবার সাথে যেমন যোগাযোগ করাসহ বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছি। গেম খেলায় ফোনে মেগাবাইট কিনতে খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, এই গেম যখন বিনোদন নেওয়ার জন্য খেলতাম তখন মাসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মেগা কিনলে হত। মেগা ছাড়া কোন খরচ ছিল না। আসতে আসতে যখন এটার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি তখন প্রতিটা ইভেন্টে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করচ না করলে যেন হয়না।গেমটিতে পুরোপুরি ভাবে মনোযোগ দিয়ে তখন দেখি গেমের ভিতরে এমন কিছু জিনিস আছে যে গুলো না কিনলে নয়। যেমন অলকের দাম ৪০০ টাকা, একটা প্লেয়ারের জার্সি ৩০০ টাকা নতুন ইভেন্টে আসলেই ২০০০ টাকা এর নিচে যাইনা। সম্পূর্ণ ড্রেস কিনতে লাগে ১২০০ টাকা আর রেগুলোর কথা তো বাদই থাকে। এ ব্যাপারে একাধীক অভিভাবকের সাথে কথা বললে অনেকেই বলেন অলস মস্তিস্কে শয়তানের বাসা বেধেছে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের মাঝে। তাই এভাবে স্কুল কলেজ বন্ধ না রেখে সামাজিক দুরত্ব মেনে সপ্তাহে গ্রুপ আকারে ৩ দিন ক্লাস নেওয়া হলে এমন খেলা করার সময় পেত না অনেকেই। সে জন্য একাধিক অভিভাবক ক্লাস ভিত্তিক গ্রুপ করে সপ্তাহে ২ দিন ক্লাস করার দাবী জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নিকট। তারা আরও বলেন, আগামী ২ মাস ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিক্ষা সহ স্কুল চালু করা না হলে গেম খেলার চেয়েও সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়বে সকল বয়সের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে নাম প্রকার্শে অনিচ্ছুক জনৈক শিক্ষক জানান, আমাদের সময় আমরা অবসর সময়টি বিভিন্ন খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে পার করতাম, কিন্তু এখনকার যুগে তরুন প্রজন্মের সন্তানদের দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। উপজেলার গ্রাম গঞ্জে মোবইল ইন্টারনেট গ্রুপ গেম এখন মহামারি আকার ধারণ করছে। ইয়ং জেনারেমন এখন ফ্রি ফায়ারের দিকে আসক্ত। যেটা কিনা একটা অনলাইন গেম সেখানে গ্রুপিং এর মাধ্যমে জুয়ার আসর তৈরী হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও যথারীতি শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে অনলাইন গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে।