জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ২০ জনের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদের মধ্যে আলোচিত গাড়িচালক আব্দুল মালেকও রয়েছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ পাঠান দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
যাদের বিষয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে তারা হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই প্রকল্পের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মজিবুল হক মুন্সি ও তার স্ত্রী রিফাত আক্তার, একই প্রকল্পের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তোফায়েল আহমেদ ভূইয়া ও তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার, গাড়ি চালক মো. আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগম, গোপালগঞ্জের আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ওবাইদুর রহমান ও তার স্ত্রী বিলকিচ রহমান, তার আরেক স্ত্রী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের স্টাফ নার্স রেহেনা আক্তার, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ইমদাদুল হক ও তার স্ত্রী মোছা. উম্মে রুমান ফেন্সী।
এছাড়া জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. মাহমুদুজ্জামান ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিন, গাজীপুরের শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোর অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী ফিরোজা বেগম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ বিভাগের অফিস সহকারী কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী ডা. উম্মে হাবিবা, গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের স্টেনোগ্রাফার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলাম, বরিশাল বিভাগের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রধান (নন মেডিকেল) বর্তমানে সহকারী প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মীর রায়হান আলী, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাব রক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দিয়েছে দুদক।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি করছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯ সাল থেকে আমরা একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করি। এরই মধ্যে মালেকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। এদের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাও হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় সাতটি প্লট এবং এসব প্লটে চারটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে বলেও তিনি জানান।
দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের স্বাক্ষরিত নোটিশটি গত ১৫ সেপ্টেম্বর পাঠানো হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪’ এর ধারা ২৬ এর উপ-ধারা (১) দ্বারা অর্পিত ক্ষমতাবলে তাদের নিজের এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে/বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী এই আদেশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে, অথবা মিথ্যা বিবরণী দাখিল করলে দুদক আইনের ২৬ (২) উপধারায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
করোনার প্রকোপ শুরুর পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে তলব করে দুদক। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সংস্থাটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জনের অভিযোগ আছে। সবশেষ সাবেক মহাপরিচালকের গাড়ি চালক আব্দুল মালেককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গাড়িচালক পদে কর্মরত হলেও র্যাবের অনুসন্ধানে তার ঢাকায় একাধিক বাড়িসহ ২৪টি ফ্ল্যাট, একাধিক গাড়ি ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
এছাড়াও কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধেও অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায় দুদক। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।