চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃকৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে তৃণমূলের পণ্য ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ডুমুরিয়ায় ২ একর ১০ শতক জমির উপর ‘ভিলেজ সুপার মার্কেট’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এনজিও ‘সলিডাড়িডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’। প্রায় ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিকমানের দৃষ্টিনন্দন এ মার্কেটি নির্মাণ শেষে গত বছর উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের এক বছরের অধিক সময়েও ওই মার্কেটটি জমানো সম্ভব হয়নি। ফলে আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। তবে মার্কেট পরিচালনা কমিটি বলছে, কৃষকদের দাদন না দেয়া, মিটারে স্বচ্ছ পরিমাপে ক্রেতাদের অনাগ্রহ ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার আন্তরিকতার অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে খুলনা জেলাধীন ডুমুরিয়া উপজেলার টিপনা গ্রামের শেখ বাড়ির সামনে ভিলেজ সুপার নামের এ মার্কেটটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ইন্টারন্যাশনাল এনজিও ‘সলিডাড়িডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’। উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ২ একর ১০ শতক জমির উপর বিদেশী নেদারল্যান্ডের অর্থে ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মার্কেটটির আনুষ্ঠানিক কাজ আরম্ভ হয়। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয় ডিপো, ১০ হাজার লিটার উৎপাদন ক্ষমতার চিলার আইচ ফ্যাক্টরি, মসজিদ, ইলেকট্রিক্যাল ম্যাকানিক্যাল রুম, হর্টি ক্যালচার প্রসেসিং জোন, হর্টি প্যাকেজিং জোন, একোয়া প্রসেসিং জোন, একোয়া প্যাকেজিং জোন, একোয়া আড়ৎ, হর্টি আড়ৎ, ব্যাংক, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, ফার্মার ট্রেনিং সেন্টার, অফিস সিকিউরিটি রুম, টয়লেট জোন ও বাউন্ডারী ওয়াল ইত্যাদি। গত বছর নির্মাণ কাজ শেষে মার্কেটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের এক বছর অতিবাহিত হলেও মার্কেটটি জমেনি।
কৃষক মোঃ মোক্তার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা জানান, মার্কেটটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিলো এলাকার তৃণমূল কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সরাসরি কৃষি পণ্য (ফল-মূল, শাক-সবজি, দুধ, মাছ ইত্যাদি) ক্রয় করে দেশের বিভাগী শহরগুলোর আগোড়া সুপার শপে বিক্রি করা। বিদেশেও রফতানি করা। এছাড়া কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের উপযোগী হয়ে গড়ে তোলা। কিন্তু কোন উদ্দেশ্যই সফল হচ্ছে না। কারণ মার্কেটে কোন ক্রেতাই নেই। ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতাও আসছে না। ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কার্যতঃ একপ্রকার অচল হয়ে পড়েছে মার্কেটটি।
কেন মার্কেটটির এমন পরিণতি হলো এ প্রশ্নে পরিচালনা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ মহসিন হোসেন শেখ বলেন, এ মার্কেটে সিসি ক্যামেরা ও ব্যাংকসহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু মার্কেটটি প্রধানত্ব দু’টি কারণে জমানো সম্ভব হয়নি। প্রথম কারণ হচ্ছে মিটারে শাক-সবজি, ফল ও মাছ পরিমাপ করা হচ্ছে। ফলে ক্রেতারা ওজনে বেশি পণ্য নিতে পারছে না। কিন্তু অন্য মার্কেটে মিটারে পরিমাপ না হওয়ায় তারা ওজনে বেশি পণ্য নিয়ে থাকে। পাশাপাশি তোলাও নেয়। দ্বিতীয়ত্ব দাদনের ব্যবসা। যেমন ডুমুরিয়া, খর্ণিয়া, থুড়কাসহ অন্যান্য মার্কেটে আগে থেকে কৃষকের কাছে দাদন দেয়া হয়। ফলে কৃষকরা ইচ্ছা থাকলেও এ মার্কেটে আসতে পারছে না। এছাড়া বাস্তবায়নকারী সংস্থা সলিডাড়িডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তারা প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলো এ মার্কেট থেকে পন্য ক্রয় করে বিদেশে বা বড় শহরগুলোর আগোড়া সুপার শপে বিক্রি করবে। কিন্তু সে প্রতিশ্র“তিও তারা রক্ষা করেনি। ফলে মার্কেট জমানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন এ মার্কেটি চাঙ্গা করতে উদ্ভুত সমস্যার দ্রুত সমাধান দরকার।