খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এতদঞ্চলের আপামর মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার পীঠস্থান হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সকল মহলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে (৪র্থ তলা) অংশীজনের অংশগ্রহণে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সকাল ১১.৩০ মিনিটে শুরু হওয়া এ মতবিনিময় সভায় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি, গবেষণা ক্ষেত্রে অগ্রগতি, ডিজিটালাইজেশন, ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান পাওয়ারপয়েন্টে উপস্থাপন করেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকতর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে নতুন হল তৈরি, প্রশাসনিক, একাডেমিকসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের গতি ত্বরান্বিত করতে সফট ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর আওতায় হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যাকবোন, সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স সিস্টেম স্থাপন এবং স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করার উদ্যোগ, নিয়মিত জাতীয়/আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন, জীববিজ্ঞান স্কুলের জন্য গ্রিনহাউস স্থাপন, কেন্দ্রীয় গবেষণাগারকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত করার লক্ষ্যে আইএসও সার্টিফাইড করা উদ্যোগ, খেলার মাঠের উন্নয়ন, আবাসিক হলসমূহে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব তৈরি, সার্বিক কাজে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনের সুবিধার্থে ইন্টারন্যাশনাল হল/ডরমেটরি তৈরি, সুন্দরবনের উপর বিশ্বমানের রিসার্চ করার জন্য যুগোপযোগী সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জীববিজ্ঞানভিত্তিক ৭টি বিভাগসমূহের জন্য মাঠ গবেষণারে প্রয়োজনীয় জমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী একশত বছরের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণ, আরও ৩০০ কিলোওয়াট সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুতের মোট চাহিদার ৪০% পূরণ, রিসার্চ ইনফরমেশন সেন্টার ডেস্ক তৈরি, সেন্ট্রাল কম্পিউটিং ল্যাব নির্মাণ, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
গবেষণায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন-প্রবীণ গবেষকদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে গবেষণা অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৪-২০০৫ সালে যেখানে গবেষণায় বরাদ্দ ছিল ১৫ হাজার টাকা, সেখানে বর্তমানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ ৫.৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। গত বছরে ১২৬৬টি গবেষণা নিবন্ধ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে আমি মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিষয় খোলার ব্যাপারে সাংবাদিকসহ অংশীজনদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের চাহিদার কথা মাথায় রেখে যথোপযুক্ত বিষয় খুলতে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে যেসব বিষয়ের চাহিদা আছে এবং শিক্ষাজীবন শেষে যার কর্মক্ষেত্র পাওয়া যাবে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্ট্র্যাটেজি প্ল্যানে খুলনা অঞ্চলের সমস্যা, জীবন-জীবিকার মানোন্নয়ন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওবিই কারিকুলা বিশ্বমানের একটি নতুন কারিকুলা। এতে ইন্টার্নশিপ, থিসিস এবং সফট স্কিলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে কাজ করলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারবে। আগে সব ডিসিপ্লিনের কারিকুলায় ইন্টার্নশিপ না থাকলেও নতুন কারিকুলায় সব ডিসিপ্লিনে ইন্টার্নশিপের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
উপাচার্য বলেন, র্যাংগিং ও মাদকের বিরুদ্ধে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেছে। এজন্য শিক্ষাবর্ষের শুরুতে নবাগত শিক্ষার্থীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে র্যাংগিং ও মাদককে না বলে শপথ করানো হয়। র্যাংগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেক সময় অভিযোগের অভাবে র্যাংগিংয়ের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য র্যাংগিং হলেই অভিযোগ জানাতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আমরা সচেতন। শিক্ষার্থীরা যাতে অধ্যয়নরত অবস্থায় চাকরিতে প্রবেশ করতে পারে এজন্য প্রতিবছর দুটি চাকরি মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকেই চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন হাবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন, এতদঞ্চলের তরুণ সমাজকে স্টার্টআপ হিসেবে গড়ে তুলতে এই হাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল দেশ ও বিদেশে জায়গা করে নিচ্ছে। অনেক সময় জাতীয় অনেক ইস্যুতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকা হয়। এ বছর জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশীপে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৯ জন স্থান পেয়েছে। বিশ্ববিজ্ঞানীদের তালিকায়ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. মতিউল ইসলাম।
মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. রায়হান আলী, প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম, প্রফেসর ড. গাউছিয়াতুর রেজা বানু, প্রফেসর ড. উত্তম কুমার মজুমদার, প্রফেসর সেহরীশ খান, প্রফেসর ড. মো. আশিক উর রহমান, প্রফেসর ড. শাহজাহান কবীর, প্রফেসর ড. লস্কর এরশাদ আলী, সরকারি বিএল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শরীফ আতিকুজ্জামান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) এস এম মনিরুজ্জামান, ইউএনবির খুলনা প্রতিনিধি শেখ দিদারুল আলম, এনটিভির খুলনা প্রতিনিধি আবু তৈয়ব, দৈনিক কালবেলার খুলনা প্রতিনিধি মল্লিক সুধাংশু, সাংবাদিক শামীম আশরাফ শেলী, কালের কণ্ঠের কৌশিক দে, বাংলাদেশ প্রতিদিনের মো. মাকসুদ আলী, দৈনিক যুগান্তরের নূর ইসলাম রকি, রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যানেল আইনজীবী এ্যাড. আফরোজা রোজী, বেডস্ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাকসুদুর রহমান, জেজেএস এর জাকির হোসেন, জাগো ফাউন্ডেশনের নুজহাত তাসফিয়া, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রেজওয়ান আহম্মেদ এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি এস এম জিলানী।
এসময় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকবৃন্দ, সকল ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, প্রভোস্ট, পরিচালক/বিভাগীয় প্রধান, এপিএ’র ফোকাল পয়েন্ট/বিকল্প ফোকাল পয়েন্ট এবং প্রতি ডিসিপ্লিনের মাস্টার্স/সম্মান শেষ বর্ষের একজন করে শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।