চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃকুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের বহুল প্রতীক্ষিত মুুক্তমঞ্চের স্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের আগেই দেখা দিয়েছে বিশাল ফাটল। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। তাদের অভিযোগ নিম্নমানের উপাদান ও কাজে অনিয়ম করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে, দায়সারা উত্তর আর অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদ্য শেষ হওয়া বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দীনকে প্রধান করে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। প্রকল্পের মোট বাজেট ছিল ৫৩ লাখ টাকা। এতে মুক্তমঞ্চের কাজ ছিল অন্যতম।
জানা গেছে, এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় কোনো ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই। এমনকি ছিল না নির্দিষ্ট কোনো নকশা। ফলে বিশৃঙ্খলভাবে কাজ সম্পন্ন হয়। কাজের মান শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিরা ও প্রকল্পের আহ্বায়ক।
শিক্ষার্থীর জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, কালচারাল অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মুক্তমঞ্চ নির্মাণ করা। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের পর সে দাবির বাস্তবায়ন হলেও হস্তান্তরের আগেই দেখা দিয়েছে বিশাল ফাটল।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মুক্তমঞ্চ নির্মাণের সময় ভবন নির্মাণের কোনো নিয়ম কানুন মানা হয়নি। পাহাড় কিংবা উঁচু স্থানে ব্রিকসের ওপর কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে মাটির নিচ থেকে ন্যূনতম ৩০ ইঞ্চি বিম প্রস্তুত করতে হয়। কিন্তু এখানে মানা হয়নি সে সব নিয়মনীতি।
দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমাকে নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সৌন্দর্যবর্ধন কমিটির আহ্বায়ক যেভাবে কাজের নির্দেশ দিয়েছেন আমি সে অনুযায়ী কাজ করিয়েছি। মুক্তমঞ্চের কাজ ছিল সম্পূর্ণ ব্রিকসনির্ভর। যে ফাটল দেখা দিয়েছে তা জয়েন্টে ছেড়ে দেওয়াতে এমন হয়েছে। এখানে আরও কিছু ঢালাই করা পিলার দেওয়া উচিত ছিল। নির্দিষ্ট কোনো নকশা না থাকায় যখন যেভাবে পরামর্শ এসেছে সেভাবেই কাজ করেছি। এখন ফাটলের বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে।’
এ বিষয়ে সৌন্দর্যবর্ধন কমিটির আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘আমি এই কাজে শুধু আইডিয়া দাতা। এখানে কীভাবে কাজ করবে কোথায় বিম হবে, কোথায় খুঁটি বেশি প্রয়োজন কিংবা কাজের মান নিশ্চিতকরণ এ বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব প্রকৌশল দপ্তরের। এখন ফাটল কেন সেটা প্রকৌশল দপ্তরই ভালো বলতে পারবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শহিদুল হাসান বলেন, ‘মুক্তমঞ্চের কাজ খুব দ্রুত করতে গিয়ে পূর্বের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তবে আমরা কাজ চলাকালীন সর্বক্ষণ তদারকি করেছিলাম। কাজে তেমন কোনো ত্রুটি হয়নি। এ ফাটল তেমন গুরুতর নয়। রিপেয়ারিং করে নিলে ঠিক হয়ে যাবে। তবে কেন ফাটল দেখা দিয়েছে সেটি আমরা শিগগিরই খতিয়ে দেখব এবং এর সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা নেব।’
সর্বশেষ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মুক্তমঞ্চের ফাটলকৃত স্থানে আলাদা সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। যাতে করে দূর থেকে বোঝা না যায় অভিযুক্ত স্থানে কতটুকু এবং কেমন ফাটল ছিল।