হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপকের চাকরির প্রস্তাব পেয়ে এনডিটিভির চাকরি ছাড়েন ভারতীয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নিধি রাজধান। গণমাধ্যমটিতে তিনি দুই দশক ধরে সাংবাদিকতা করে আসছেন। এরপর আমেরিকায় পাড়ি জমানোর প্রস্তাব পান।
পরে জানতে পারেন তিনি আসলে ফিশিং স্ক্যামের খপ্পরে পড়েছেন। প্রতারণার শিকার হওয়ার কথা পরবর্তীতে সবিস্তারে টুইটারে পোস্ট করেন এই সাংবাদিক।
২০১৯ সালের নভেম্বরে নিধি রাজধান হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। ২০২০ সালের শুরুতে এই অনুষ্ঠান হয়।
একই সময়ে আরেকটি অনুষ্ঠানের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা নিধিকে জানান যে আগ্রহী হলে হার্ভার্ডে শিক্ষকতার সুযোগ পাবেন।
এর কয়েক সপ্তাহ পরে ৯০ মিনিট ধরে নিধির অনলাইন সাক্ষাৎকার হয়। এ সময় নিধির মনে কোনো প্রশ্নই ওঠেনি। সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলছে বলেই তার মনে হয়েছে।
গুগলে সার্চ করে নিধি দেখেন যে হার্ভার্ড এক্সটেনশন স্কুল প্রোগ্রামের আওতায় জার্নালিজম ডিগ্রি আছে। তার কোনো সন্দেহ হয়নি।
তিনি দেখেন, হার্ভার্ড এক্সটেনশন স্কুলের একটি তালিকা আছে, সেখানে ৫০০ জন ফ্যাকাল্টি আর এর মধ্য ১৭ জন জার্নালিজম ফ্যাকাল্টির।
আর এটা দেখেই নিধির মনে হয়েছিল এ প্রোগ্রামে তিনি উপযুক্ত। কিন্তু পরে জানা যায় আসলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা নামে আলাদা বিভাগ নেই। আসল নাম, দ্য মাস্টার্স অব লিবারেল আটস, জার্নালিজম ডিগ্রি।
২০২০ সালে জানুয়ারিতে নিধি রাজধান একটি মেইল পান হার্ভার্ড থেকে। তার মনে হয়েছিল এটি হার্ভার্ডের অফিশিয়াল মেইল। মেইলে অফার লেটারও ছিল। চিঠিতে হার্ভার্ডের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সইও ছিল।
আর যারা সই করেছেন, সেই নামের ব্যক্তিরাও হার্ভার্ডে আছেন। এরপর নিধির সঙ্গে ওই ই–মেইল থেকে নানা তথ্যের জন্য মেইল চালাচালি হয়। সেখানে নিধি রাজধান তার ব্যক্তিগত সব তথ্যই শেয়ার করেছেন। আর ওয়ার্ক ভিসার জন্য তথ্য লাগবে বলে সব তথ্য তিনি দিয়েছেন।
নিধি এরই মধ্যে ২০২০ সালে মার্চে ওরিয়েন্টেশনের জন্য আমন্ত্রণও পান। পরে বলা হয়, কোভিড–১৯–এর কারণে তা বাতিল। এ সময়ও সন্দেহ হয়নি তার।
তখন লকডাউন চলছে। এরই মধ্য ক্লাসের রুটিন, পড়ানোর বিষয়ও মেইলে পেয়ে যান নিধি। আর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ক্লাস শুরুর তারিখও পেয়ে যান।
অক্টোবর পেরিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি এলেও কোভিডের কারণে ক্লাস পেছাচ্ছে বলে তাকে জানানো হয়।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বেতন দেওয়ার কথা বলা হয় রাজদানকে। জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো বেতন তার অ্যাকাউন্টের আসেনি।
অনলাইন জটিলতায় এমনটি হচ্ছে না বলে মেইল আসে। কিন্তু পরের মেইলে একটি পেমেন্ট স্লিপ আসে। কিন্তু সাংবাদিক রাজধানের অ্যাকাউন্টে কোনো অর্থ যোগ হয়নি। তখনই কিছুটা সন্দেহ হয় নিধির।
কোভিডের কারণে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অনলাইন ক্লাস করাচ্ছে। এটা ভেবে তার সন্দেহ হয়। এরপরই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নিধি।
তার সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে চাকরিসংক্রান্ত, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠান তিনি। হার্ভার্ড বলেছে, তাদের নথিতে নিধি রাজধানকে চাকরি দেওয়ার কোনোও তথ্য নেই।
ওদের কথা শুনে হতবাক হয়ে যান রাজধান। জানা যায়, পুরোটাই ভুয়া ছিল। আর তিনি সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছেন। দিল্লি পুলিশের সাইবার অপরাধ কক্ষ থেকে এ ঘটনায় তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে।
সোমবার তিনি পুলিশের কাছে জালিয়াতি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন। ১৬ জানুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের কাছেও তিনি এমন একটি অভিযোগ করেছেন।
এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হাতে নেয়া হবে।
এই সাংবাদিকের আইনজীবী শ্রী সিং বলেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষকতা করতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নিধিকে প্রস্তাব দিয়ে একটি ইমেইল দেয়া হয়েছে। এরপর গত জুনে এনডিটিভির নির্বাহী সম্পাদকের পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন।