চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃগণপূর্ত অধিদপ্তরে দশটি দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে বিশ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরত্ব এর সঙ্গে দেখছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বুধবার সচিবালয়ে দুদকের প্রতিবেদন হাতে পেয়ে মন্ত্রী একথা জানান।তিনি বলেন, দুদকের এই প্রতিবেদন আমাদের কাজের গতি বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা আনতে এবং জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি এই গাইডলাইনকে আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবো। যদি তদন্ত কমিটি করা লাগে, ডমেস্টিক কমিটি করা লাগে, পদ্ধতি পরিবর্তন করা লাগে, যা কিছু করা লাগে এই রিপোর্টটাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব।’
এর আগে দুদকের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান এর নেতৃত্বে গণপূর্ত অধিদপ্তরের জন্য গঠিত দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক টিম সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এসময় তারা গণপূর্ত অধিদপ্তরে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান ও প্রতিকার সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
এসময় দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘দুদক ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে টিম গঠন করেছে। একেকটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কে একেকটি টিম। টিমগুলো ওইসব প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা-সক্ষমতা, কাজের গাফিলতি, দুর্নীতিপ্রবণ যে জায়গাগুলো, কোন কোন ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করলে দুর্নীতি রোধ করা যায় সেই বিষয়গুলো পরীক্ষা করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। ২৫টির মধ্যে আজকের প্রতিবেদনটি ১৫তম। এই প্রতিবেদনের মূল বিষয় হচ্ছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তিনি আরো বলেন, ‘এই প্রতিবেদনটি এক ধরনের গাইডলাইন,পর্যবেক্ষণ ও সংক্ষিপ্ত জরিপ। এই কাজটি করতে এই মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্টেক হোল্ডার, ঠিকাদার, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, এই মন্ত্রণালয়ের অডিট রিপোর্ট এবং বার্ষিক প্রতিবেদন সবকিছু পর্যালোচনা করা হয়েছে। এটি একটি যৌক্তিক প্রতিবেদন।
দুদক টিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘এটাকে যতটা বিস্তৃত করা যায়, এই গাইডলাইনের আলোকে যতটা পরিসর বাড়িয়ে কাজের স্বচ্ছতা আনা যায় সেক্ষেত্রে আমাদের মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর থেকে শুরু করে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত আমরা এই বিষয়টি সম্প্রসারিত করব। আমরা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরত্ব দিয়ে তা বাস্তবায়ন করবো। দুর্নীতি নির্মূল করবোই।’
মন্ত্রীর হাতে দেয়া দুদকের প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটিতে দশটি দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে বিশ দফা সুপারিশ করেন দুদক টিম।দুর্নীতির উৎসগুলো হলো-টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি যেমন- যথাযথভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করা, অপছন্দের ঠিকাদারকে নন রেসপন্সিভ করা, অস্বাভাবিক মূল্যে প্রাক্কলন তৈরি, ছোট ছোট প্যাকেজে প্রকল্প প্রণয়ন, টেন্ডারের শর্তানুসারে কাজ বাস্তবায়ন না করা।
এছাড়া নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, প্রকল্প প্রণয়ন, তদারকি, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কাজে ধীরগতি, প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম, অনাবশ্যক প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি, স্থাপত্য ও কাঠামোগত নকশা চূড়ান্তে বিলম্ব, প্রত্যাশী সংস্থার প্রয়োজন মতো জরুরি ভিত্তিতে কার্য সম্পাদন না করা, সেবা প্রদানের বিভিন্ন স্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতা, সময়মতো ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ না করা। তাছাড়া বরাদ্দ থাকার পরও ঠিকাদারদের আংশিক বিল পরিশোধ করার বিষয়টিকে দুর্নীতির উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুদক।