বিয়ের পর প্রত্যেক দম্পতির স্বপ্ন থাকে কোলজুড়ে আসবে নতুন অতিথি। কেউ বিয়ের পর পরই সন্তান নিয়ে নেন। আবার অনেকে দেরি করে সন্তান নেন। আবার কেউবা বিয়ে করেন দেরিতে।
সন্তান নেওয়ার একটি নির্দিষ্ট বয়স আছে। ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা ও আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় অনেকেই সন্তান নিতে চান দেরি করে। কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে এমনটি বেশি ঘটে থাকে।
আবহাওয়া, জলবায়ু ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশে ৩৫ বছর বয়সের পর মা হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ছে। বেশি বয়সে মা হলে কিছু বাড়তি জটিলতার সৃষ্টি হয়।
প্রথম সন্তান নেওয়ার জন্য মেয়েদের ২৫ বছর উপযুক্ত সময়। আর ৩৫ বছর বয়সের পর সন্তান না নেওয়াটাই ভালো। সাধারণত ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত ঝুঁকিহীন হয়ে সন্তান জন্ম দেওয়া যায়। এর পর বয়স যত বাড়তে থাকে, তত বেশি শরীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
অনেক ক্ষেত্রে ৩৫ বছর পেরিয়ে গেলে দেখা যায় সন্তান আর হতে চায় না। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এসব নানা রোগ দেখা দেয়। এ ছাড়া অস্বাভাবিক শিশু জন্ম নেওয়ার আশঙ্কাও থাকে। আর ৪০ বছরের বেশি বয়স হলে আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে মাত্র ৫ শতাংশ।
আসুন ৩৫ বছরের পর বা বেশি বয়সে মা হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিসমূহ জেনে নিই-
গর্ভধারণে দীর্ঘসূত্রতা
একজন নারী জন্মের সময় কিছুসংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায়, যা সময়ের সঙ্গে নিঃশেষ হতে থাকে। ৩০ বছরের পর থেকেই ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান কমতে থাকে। এতে করে এ সময়ে গর্ভধারণ করার চেষ্টার পরও দিনের পর দিন ব্যর্থ হতে পারে। তাই ৩০ বছরের পর কেউ যদি মা হওয়ার জন্য ছয় মাস চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস
গর্ভকালে অনেক মা ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন। বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে এর আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। কনসিভ করার আগে থেকেই কিছু মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কনসিভ করার আগ থেকেই তাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস শিশুর বিকলাঙ্গতা, ওজন বৃদ্ধি ও অধিক মৃত্যু-ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ
বয়স্ক মায়েদের গর্ভকালে উচ্চ রক্তচাপে ভোগার আশঙ্কা বেড়ে যায়। গর্ভকালের সময় নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা এড়ানো যায়।
অধিক গর্ভপাতের আশঙ্কা
এ সময়ে অধিক গর্ভপাতের কারণের মধ্যে রয়েছে মায়ের বিভিন্ন অসুখ যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ ইত্যাদি। এ ছাড়া বাচ্চার জিনগত ত্রুটি বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ে, যা গর্ভপাতের কারণ ঘটায়।
সিজারের আশঙ্কা বৃদ্ধি
গর্ভকালে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেওয়ার কারণে বয়স্ক মায়েদের সিজারের আশঙ্কা বেশি থাকে।
ভ্রূণের জিনগত ত্রুটি
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভ্রূণের জিনগত ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। মায়ের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ডাউন সিনড্রোম (ক্রোমোজোমাল ত্রুটিপূর্ণ নবজাতক) নিয়ে শিশু জন্মানোর হারও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫ বছর বয়সী মায়েদের ডাউন সিনড্রোম সন্তান হওয়ার ঝুঁকি থাকে প্রতি ২৫০০ জনের মধ্যে একজনের, যা ৪০ বছর বয়সী মায়েদের ক্ষেত্রে গিয়ে দাঁড়ায় প্রতি ১০০ জনে একজন। এমনিয়টিক ফ্লুইড (গর্ভস্থ বাচ্চার চারদিকের পানি) নিয়ে পরীক্ষা করে কনসিভের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ভ্রুণের জীনগত ত্রুটি শনাক্ত করা সম্ভব।
অন্যান্য জটিলতা
এ ছাড়া মাল্টিপল প্রেগন্যান্সি (একাধিক সন্তান গর্ভধারণ), সময়ের আগেই সন্তান হওয়া, গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু, কম ওজনের শিশু জন্মদান ইত্যাদি জটিলতা বয়সের সঙ্গে বাড়ে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাসিক অনিয়মিত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে প্রেগন্যান্সির আগেই ওষুধের মাধ্যমে কন্ট্রোলে রাখতে হবে।
এ ছাড়া কনসিভ করার পর পরই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন।
৩৫- এর পর মা হতে চাইলে
কেউ যদি ৩৫ বছরের পর মা হতে চান তা হলে উপরোল্লিখিত ঝুঁকি থাকবে এটিই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।